বাল্ক এসএমএস কী?

বাল্ক এসএমএস হলো এক ধরনের ইন্টারনেট ভিত্তিক মেসেজিং সার্ভিস যাতে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠানের নাম বা পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল বা অন্যান্য এসএমএস একই সাথে অনেক গ্রাহক কে প্রেরণ করা হয়। বাল্ক এসএমএস সার্ভিস প্রভাইডার মূলত একটি একাউন্ট দিয়ে থাকে যাতে পাসওয়ার্ড এর মাধ্যমে লগইন করে বা কোনো অ্যাপ ব্যবহার করে এই ধরনের এসএমএস প্রেরণ করা হয়।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য এসএমএস এর ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু বাল্ক এসএমএস এর কনসেপ্ট এর থেকে আলাদা। বাল্ক এসএমএস মূলত একইসাথে অনেকজনকে একই এসএমএস প্রেরণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এতে সময়, পরিশ্রম ও জনবল সবই কম প্রয়োজন হয়। আমাদের মোবাইল ফোনে অনেক সময় কিছু প্রমোশনাল এসএমএস আসে। এসব এসএমএস কখন ও কোনো একটি নির্দিষ্ট নম্বর থেকে আসে আবার অনেকসময় কোনো প্রতিষ্ঠান এর নাম উল্লেখ করা থাকে।

বাল্ক এসএমএস দুই ধরনের হয়ে থাকে।

                                                                                                                            (১) মাস্কিং এসএমএস এবং

(২) নন-মাস্কিং এসএমএস

মাস্কিং এসএমএস এর ক্ষেত্রে গ্রাহকের ফোনে কোনো প্রতিষ্ঠান এর নাম উল্লেখ করে এসএমএস পাঠানো হয়। যেমন- Gp Offer, Bkash, Nagad. অপরদিকে, নন-মাস্কিং এসএমএস এর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ঠ নম্বর ব্যবহার করে এসএমএস করা হয় এবং এই ধরনের এসএমএস রিপ্লাই দেয়া যায় যা মাস্কিং এসএমএস এর ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। যেমন- 24000, +880174123020, +880666330900. 

বাল্ক এসএমএস কেন ব্যবহার করব?

মনে করুন, আপনার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে এবং সেখানে 3000 শিক্ষার্থী ভর্তি আছে। আপনার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি জরুরী নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজন। কিন্তু 3000 শিক্ষার্থীকে এক এক করে এসএমএস এর মাধ্যমে নোটিশ টি প্রেরণ করলে যেমন আপনার অনেক সময়, শ্রম প্রয়োজন তেমনি এটা অনেক ব্যয়বহুল। এক্ষেত্রে আপনি বাল্ক এসএমএস সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন। এতে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে আপনার এসএমএস টি 3000 শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে যাবে।

এরকম আরও কিছু বিশেষ ক্ষেত্র আছে যেখানে বাল্ক এসএমএস সার্ভিস ব্যবহার করে উপকৃত হওয়া যায় এবং সেগুলো হলোঃ

  • প্রচার বা বিজ্ঞাপনঃ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের পণ্যের প্রচারণা করার জন্য গ্রাহকদের কাছে সেই পণ্যের সম্পর্কে তথ্য প্রেরণ করা হয় এবং বিভিন্ন অফার প্রদান করা হয়।
  • ব্যবসায়িক যোগাযোগ রক্ষাঃ প্রতিষ্ঠান তার কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগের জন্য বা অনেকসময় কোনো উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে শুভেচ্ছা জানানো এসব কাজে ব্যবহার করা হয়।
  • জনসচেতনতা বৃদ্ধিঃ সরকারীভাবে বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর দ্বারা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধান এর লক্ষ্যে সতর্কতামূলক এসএমএস প্রেরণ করা হয়।

 

এছাড়াও আরও বিভিন্ন কাজে বাল্ক এসএমএস ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রধান উদ্দেশ্য থাকে প্রধানত সময়, শ্রম ও খরচ কমানো।

 

বাল্ক এসএমএস কিভাবে ব্যবহার করব?

নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে খুব সহজেই বাল্ক এসএমএস প্রেরণ করা যেতে পারেঃ

  • গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহঃ যেসব গ্রাহককে আপনি এসএমএস পাঠাতে চান তাদের তথ্য যেমন- নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে।
  • বাল্ক এসএমএস প্রভাইডার নির্বাচন করাঃ কোন বাল্ক এসএমএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস আপনি ব্যবহার করতে চান সেটা নির্বাচন করতে হবে।
  • বার্তা তৈরিঃ আপনি গ্রাহককে যেই বার্তা এসএমএস এর মাধ্যমে প্রেরণ করতে চান সেটা তৈরি করুন।
  • গ্রাহকের তালিকা আপলোডঃ আপনি বাল্ক এসএমএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওযেবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনে আপনার গ্রাহকের তালিকা সাবমিট করুন।
  • বার্তা প্রেরণঃ বার্তা এবং গ্রাহকের তালিকা আপলোড করা হলে, বার্তা প্রেরণ কনফার্ম করুন।

 

এভাবে খুব সহজেই আপনি বাল্ক এসএমএস সার্ভিস ব্যবহার করে এসএমএস পাঠাতে পারবেন।

 

বাল্ক এসএমএস এর সুবিধা কী?

বাল্ক এসএমএস ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে। নিচে কিছু সুবিধা উল্লেখ করা হলোঃ

  • ম্যাস কমিউনিকেশনঃ একইসাথে বিশাল জনগোষ্ঠীর সাথে এসএমএস এর মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায়।
  • প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা বৃদ্ধিঃ কোনো একটি নতুন বা বিশেষ পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বা মাস্কিং এসএমএস ব্যবহার করে প্রেরণ করার ফলে প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বৃদ্ধি পায়।
  • ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীন যোগাযোগ রক্ষাঃ কোনো প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে একত্রিত করার বা অন্য কোনো জরুরী নোটিশ প্রদান করার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
  • খরচ কমানোঃ অনেক গ্রাহককে আলাদা আলাদভাবে এসএমএস প্রেরণ করলে তা অনেক ব্যয়বহুল হয় কিন্তু বাল্ক এসএমএস এর বিভিন্ন প্যাকেজ ব্যবহার করে এই খরচ অনেকাংশে কমানো যায়।
  • কাস্টমাইজেশনঃ বাল্ক এসএমএস এর মাধ্যমে আপনার টার্গেট গ্রাহককে মাথায় রেখে বিশেষভাবে এসএমএস এর ফরম্যাট সেট করতে পারেন বা কাস্টমাইজ করতে পারেন আপনার প্রয়োজন মতো ।

 

মূলত, এসব সুবিধার জন্যই তথাকথিত বা সিঙ্গেল এসএমএস ব্যবহার না করে বাল্ক এসএমএস সার্ভিস ব্যবহার করা হয়।

 

বাল্ক এসএমএস এর চ্যালেঞ্জসমূহ

বাল্ক এসএমএস এর অনেক সুবিধা থাকলেও ব্যবহারকারীকে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়, যেমনঃ

  • স্প্যাম ফিল্টারজনিত সমস্যাঃ কিছু গ্রাহক স্প্যাম এসএমএস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাদের মোবাইলে স্প্যাম ফিল্টার ব্যবহার করে থাকে। এক্ষেত্রে সন্দেজনক নম্বর থেকে আসা এসএমএস গ্রাহকের মোবাইলে প্রবেশ না ও করতে পারে। এক্ষেত্রে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হতে পারে। এর সমাধান হিসেবে নন-মাস্কিং এসএএমএস ব্যবহার না করে মাস্কিং এসএমএস ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • নেটওয়ার্কজনিত সমস্যাঃ যেহেতু বাল্ক এসএমএস মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রেরণ করা হয়ে থাকে, তাই নেটওয়ার্কের দুর্বলতার কারণে এসএমএস সঠিক সময়ে না পৌঁছে দেরিতে পৌঁছাতে পারে।
  • ম্যাসেজের ডিজাইনঃ এসএমএস এর ‍ডিজাইন এমন হতে হবে যেন গ্রাহক এসএমএস টিকে গুরুত্ব সহকারে পড়ে । আকর্ষণীয় ডিজাইন না হয়ে অবাঞ্চিত কোনো ডিজাইন বা ফরম্যাট এ এসএমএস পাঠালে তা গ্রাহকের কাছে গ্রহণযোগ্য না ও হতে পারে। নন-মাস্কিং এসএমএস যেহেতু দামে তুলনামূলক কম তাই এখানে কাস্টমাইজেশন করার সক্ষমতা কম থাকে। মাস্কিং এসএমএস এ এই সুবিধা পাওয়া যায়।
  • প্রমোশনাল এসএমএস অফঃ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রাহক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অপ্রাসঙ্গিক প্রমোশনাল ভিডিও এর প্রতি বিরক্ত হয়ে প্রমোশনাল এসএমএস এর অপশনটি অফ করে রাখে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছে এসএমএসটি পৌঁছাবে না ।
  • প্রফিট্যাবিলিটিঃ বাল্ক এসএমএস এর প্যাকেজ কেনার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রফিট্যাবল এমন প্যাকেজ ক্রয় করতে হবে। তাই ছোট প্রতিষ্ঠান বা নতুন ব্যবসা হলে নন-মাস্কিং এসএমএস ব্যবহার করা ভালো। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং করার উদ্দেশ্য থাকেলে মাস্কিং এসএমএস ব্যবহার করা উচিত। জেনে রাখা ভালো, মাস্কিং এসএমএস এর দাম নন-মাস্কিং এসএমএস এর প্রায় দ্বিগুণ।

 

এসব চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আগে থেকে জেনে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে এর থেকে সৃষ্টি হওয়া সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।

 

বাল্ক এসএমএস এর ভবিষ্যত

বাল্ক এসএমএস খুব পুরনো কোনো প্রযুক্তি নয়। বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় ভূমিকা রাখার মাধ্যমে এই প্রযুক্তি অনেক পরিচিত এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণিত হয়েছে। তবে এর যে দিকগুলো আরও উন্নত করা যেতে পারে তা হলোঃ 

  • এসএমএস এর নিজস্বতা ও গোপনীয়তা রক্ষা করা
  • প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং
  • গ্রাহকের সাথে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক দৃঢ় করা

 

এসব উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যত এই প্রযুক্তি বহুল পরিচিত হবে এবং এর সেবার মাধ্যমে আমাদের শ্রম, সময় এবং খরচ বাঁচবে।

 

শেষ কথা

বাল্ক এসএমএস হলো একটি কার্যকর মার্কেটিং প্রযুক্তি যা প্রতিষ্ঠানের বা ব্যবসার কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। এটি একাধিক গ্রাহকের কাছে একটি বার্তা প্রেরণের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে এবং বিভিন্ন লক্ষ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন- বিপণন, ব্র্যান্ডিং ইত্যাদি। বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বাল্ক এসএমএস সার্ভিস প্যাকেজ রয়েছে। বাল্ক এসএমএস মার্কেটিং সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক প্রসারিত করতে সাহায্য করে এবং উদ্যোগগুলির প্রচার করে।